ঢাকা ০৯:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাড়ি দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে শরীরের এ হাল করেছেন তিনি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:১৪:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ নভেম্বর ২০২০
  • ১৬৬ বার

 

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রহস্য আর বৈচিত্র্যে ঘেরা পৃথিবীর মানুষগুলোও ব্যতিক্রম নয়। বিভিন্ন সময় বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের মানুষের খোঁজ পাওয়া যায়। যারা কিনা নিজেদের কাজের সুবিধা মতো গড়ে তুলেছেন। কেউ বা আবার অন্যদের থেকে আলাদা হতেই করেছেন এসব।

তেমনি একজন ব্যক্তি গ্রাহাম। অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা গ্রাহাম গাড়ি দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে নিজেকে এলিয়েন সাজিয়েছেন। তার ধারণা মানুষের আকার আকৃতি বা অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো এমনভাবে গড়া যে, দুর্ঘটনার সময় খুব সহজেই এগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

গ্রাহামের শরীরের ডিজাইন করেছেন প্যাট্রিসিয়া পিক্সিনিনি

গ্রাহামের শরীরের ডিজাইন করেছেন প্যাট্রিসিয়া পিক্সিনিনি

আর মানুষের আকৃতির বাইরে কিছু এলে তাকে তো আমরা ভিনগ্রহের প্রাণী এলিয়েনই বলে থাকি। গ্রাহামের ছবি দেখে নিশ্চয়ই এই নামের যথার্থতা বুঝতে পারছেন। গ্রাহাম নিজেকে পরিবর্তন করেছেন প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে।

গ্রাহামের আগের চেহারা

গ্রাহামের আগের চেহারা

এই যেমন ঘাড়ের কথাই ধরুন না। একটু খেয়াল করলেই দেখবেন বিভিন্ন গাড়ি দুর্ঘটনার সময় মানুষ ঘাড়েই বেশি ব্যথা পায়। আর সেখান থেকে আরো অন্যান্য সমস্যা। আর তাই তো গ্রাহাম তার ঘাড়ের অস্তিত্বই রাখেন নি। প্লাস্টিক সার্জারি করে কান ও নাক রক্ষার জন্য সেগুলোকে সমতল এবং মাংসল মুখ রেখেছেন।

গ্রাহামের মাথার ও ঘাড়ের অংশগ্রাহামের মাথার ও ঘাড়ের অংশ

পাঁজরের খাঁচায় অতিরিক্ত স্তনবৃন্তগুলো প্রাকৃতিক এয়ারব্যাগের সেট হিসেবে পাঁজরের হাড় রক্ষা করে। তিনি মনে করেন গাড়ি দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে মানবদেহের জন্য এই সমস্ত পরিবর্তন প্রয়োজন। তার মস্তিষ্ক, খুলি, মুখ, ঘাড়, পাঁজর খাঁচা, ত্বক, হাঁটু এবং পা আমাদের থেকে আলাদা। এই সার্জারিটি করতে ব্যয় করেছেন অস্ট্রেলিয়ান ২,০০,০০০ ডলার অর্থাৎ প্রায় ১,৮৯,০০০ মার্কিন ডলার।

গ্রাহামের হাঁটু

গ্রাহামের হাঁটু

গ্রাহাম তার শরীরে প্রথম সার্জারি করেন ২০১৫ সালে। অস্ট্রেলিয়ার প্যাট্রিসিয়া পিক্সিনিনি নামক ট্রমা সার্জন, রোড কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ার তার দেহতে এমন ডিজাইন করেন। যাতে করে বিভিন্ন দুর্ঘটনা থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারেন। কারণ গাড়ি দুর্ঘটনার সময় আমাদের দেহ নরম ও দুর্বল হয়ে যায়।

গ্রাহামের পা দুটিও তৈরি করা হয়েছে বিশেষভাবে

গ্রাহামের পা দুটিও তৈরি করা হয়েছে বিশেষভাবে

এজন্য তার মুখের গঠনেও অনেকটা সমতল রেখেছে। যাতে তার নাক, চোখের কোনো ক্ষতি না হয়, তাই তার মুখ সমতল করে তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও তার হাতে কোনো কনুই নেই। যার ফলে তিনি তার হাত যেকোনো দিকে ঘুরাতে পারে। গ্রাহাম তার শরীরে কিছু অতিরিক্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ লাগিয়েছেন।

গ্রাহামকে প্রদর্শন করা হয়  ষ্টেট লাইব্রেরি অব ভিক্টোরিয়াতে

গ্রাহামকে প্রদর্শন করা হয় ষ্টেট লাইব্রেরি অব ভিক্টোরিয়াতে

সংঘর্ষের সময় যাতে তার মাথায় কোনো আঘাত না লাগে, তাই তার মাথায় একটি সেরিব্রোস্পাইনাল নামক তরল পদার্থের সঙ্গে যুক্ত করে একটি বৃহৎ খুলি রয়েছে। তার মাথাটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যেন তাকে দেখলে মনে হয় তার কোনো গলা নেই। তার পা দুইটি তৈরি করতেও বেশ মাথা খাটাতে হয়েছে ডিজাইনারকে। আর পা দুটির এমন গঠন দেয়া হয়েছে যেন তিনি কোথাও পড়ে গেলে দ্রুত লাফিয়ে উঠতে পারে।

গ্রাহামকে দেখে অনেকে বলেন, তিনি হলেন জীবন্ত এক ভাস্কর্য। তবে তাকে যে তৈরি করেছেন অর্থাৎ প্যাট্রিসিয়া পিক্সিনিনি বলেছেন, এটি একটি শিল্পকর্ম। গ্রাহাম নিজেকে গাড়ি দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করতে তার শরীরে এমন করেছেন।

ডিজিটাল উপায়ে দর্শনার্থীদের দেখানো হয়েছে গ্রাহামের শরীরের ভেতরের অবস্থা

ডিজিটাল উপায়ে দর্শনার্থীদের দেখানো হয়েছে গ্রাহামের শরীরের ভেতরের অবস্থা

গ্রাহাম স্টেট লাইব্রেরি অব ভিক্টোরিয়ায় ২০১৫ সালের আগস্ট মাসের প্রথম দিকে প্রদর্শিত হয়। তারপর তাকে নিয়ে পুরো অস্ট্রেলিয়ায় বিভিন্ন রোড শোয়ের আয়োজন করা হয়। তাকে দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন মানুষ ভিড় জমায়। তারপর থেকে তিনি অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। এই শোতে ডিজিটাল উপায়ে দর্শনার্থীদের দেখানো হয়েছে গ্রাহামের শরীরের ভেতরের অবস্থা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

গাড়ি দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে শরীরের এ হাল করেছেন তিনি

আপডেট টাইম : ০৭:১৪:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ নভেম্বর ২০২০

 

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রহস্য আর বৈচিত্র্যে ঘেরা পৃথিবীর মানুষগুলোও ব্যতিক্রম নয়। বিভিন্ন সময় বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের মানুষের খোঁজ পাওয়া যায়। যারা কিনা নিজেদের কাজের সুবিধা মতো গড়ে তুলেছেন। কেউ বা আবার অন্যদের থেকে আলাদা হতেই করেছেন এসব।

তেমনি একজন ব্যক্তি গ্রাহাম। অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা গ্রাহাম গাড়ি দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে নিজেকে এলিয়েন সাজিয়েছেন। তার ধারণা মানুষের আকার আকৃতি বা অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো এমনভাবে গড়া যে, দুর্ঘটনার সময় খুব সহজেই এগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

গ্রাহামের শরীরের ডিজাইন করেছেন প্যাট্রিসিয়া পিক্সিনিনি

গ্রাহামের শরীরের ডিজাইন করেছেন প্যাট্রিসিয়া পিক্সিনিনি

আর মানুষের আকৃতির বাইরে কিছু এলে তাকে তো আমরা ভিনগ্রহের প্রাণী এলিয়েনই বলে থাকি। গ্রাহামের ছবি দেখে নিশ্চয়ই এই নামের যথার্থতা বুঝতে পারছেন। গ্রাহাম নিজেকে পরিবর্তন করেছেন প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে।

গ্রাহামের আগের চেহারা

গ্রাহামের আগের চেহারা

এই যেমন ঘাড়ের কথাই ধরুন না। একটু খেয়াল করলেই দেখবেন বিভিন্ন গাড়ি দুর্ঘটনার সময় মানুষ ঘাড়েই বেশি ব্যথা পায়। আর সেখান থেকে আরো অন্যান্য সমস্যা। আর তাই তো গ্রাহাম তার ঘাড়ের অস্তিত্বই রাখেন নি। প্লাস্টিক সার্জারি করে কান ও নাক রক্ষার জন্য সেগুলোকে সমতল এবং মাংসল মুখ রেখেছেন।

গ্রাহামের মাথার ও ঘাড়ের অংশগ্রাহামের মাথার ও ঘাড়ের অংশ

পাঁজরের খাঁচায় অতিরিক্ত স্তনবৃন্তগুলো প্রাকৃতিক এয়ারব্যাগের সেট হিসেবে পাঁজরের হাড় রক্ষা করে। তিনি মনে করেন গাড়ি দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে মানবদেহের জন্য এই সমস্ত পরিবর্তন প্রয়োজন। তার মস্তিষ্ক, খুলি, মুখ, ঘাড়, পাঁজর খাঁচা, ত্বক, হাঁটু এবং পা আমাদের থেকে আলাদা। এই সার্জারিটি করতে ব্যয় করেছেন অস্ট্রেলিয়ান ২,০০,০০০ ডলার অর্থাৎ প্রায় ১,৮৯,০০০ মার্কিন ডলার।

গ্রাহামের হাঁটু

গ্রাহামের হাঁটু

গ্রাহাম তার শরীরে প্রথম সার্জারি করেন ২০১৫ সালে। অস্ট্রেলিয়ার প্যাট্রিসিয়া পিক্সিনিনি নামক ট্রমা সার্জন, রোড কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ার তার দেহতে এমন ডিজাইন করেন। যাতে করে বিভিন্ন দুর্ঘটনা থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারেন। কারণ গাড়ি দুর্ঘটনার সময় আমাদের দেহ নরম ও দুর্বল হয়ে যায়।

গ্রাহামের পা দুটিও তৈরি করা হয়েছে বিশেষভাবে

গ্রাহামের পা দুটিও তৈরি করা হয়েছে বিশেষভাবে

এজন্য তার মুখের গঠনেও অনেকটা সমতল রেখেছে। যাতে তার নাক, চোখের কোনো ক্ষতি না হয়, তাই তার মুখ সমতল করে তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও তার হাতে কোনো কনুই নেই। যার ফলে তিনি তার হাত যেকোনো দিকে ঘুরাতে পারে। গ্রাহাম তার শরীরে কিছু অতিরিক্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ লাগিয়েছেন।

গ্রাহামকে প্রদর্শন করা হয়  ষ্টেট লাইব্রেরি অব ভিক্টোরিয়াতে

গ্রাহামকে প্রদর্শন করা হয় ষ্টেট লাইব্রেরি অব ভিক্টোরিয়াতে

সংঘর্ষের সময় যাতে তার মাথায় কোনো আঘাত না লাগে, তাই তার মাথায় একটি সেরিব্রোস্পাইনাল নামক তরল পদার্থের সঙ্গে যুক্ত করে একটি বৃহৎ খুলি রয়েছে। তার মাথাটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যেন তাকে দেখলে মনে হয় তার কোনো গলা নেই। তার পা দুইটি তৈরি করতেও বেশ মাথা খাটাতে হয়েছে ডিজাইনারকে। আর পা দুটির এমন গঠন দেয়া হয়েছে যেন তিনি কোথাও পড়ে গেলে দ্রুত লাফিয়ে উঠতে পারে।

গ্রাহামকে দেখে অনেকে বলেন, তিনি হলেন জীবন্ত এক ভাস্কর্য। তবে তাকে যে তৈরি করেছেন অর্থাৎ প্যাট্রিসিয়া পিক্সিনিনি বলেছেন, এটি একটি শিল্পকর্ম। গ্রাহাম নিজেকে গাড়ি দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করতে তার শরীরে এমন করেছেন।

ডিজিটাল উপায়ে দর্শনার্থীদের দেখানো হয়েছে গ্রাহামের শরীরের ভেতরের অবস্থা

ডিজিটাল উপায়ে দর্শনার্থীদের দেখানো হয়েছে গ্রাহামের শরীরের ভেতরের অবস্থা

গ্রাহাম স্টেট লাইব্রেরি অব ভিক্টোরিয়ায় ২০১৫ সালের আগস্ট মাসের প্রথম দিকে প্রদর্শিত হয়। তারপর তাকে নিয়ে পুরো অস্ট্রেলিয়ায় বিভিন্ন রোড শোয়ের আয়োজন করা হয়। তাকে দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন মানুষ ভিড় জমায়। তারপর থেকে তিনি অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। এই শোতে ডিজিটাল উপায়ে দর্শনার্থীদের দেখানো হয়েছে গ্রাহামের শরীরের ভেতরের অবস্থা।